1. news@banglareveal.com : বাংলা রিভিয়েল : বাংলা রিভিয়েল
  2. info@www.banglareveal.com : বাংলা রিভিয়েল :
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরভাবে বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী প্রস্তুত। প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীন এরবাকান ছিলেন ইসলামী বিশ্ব ও আধুনিক নেতৃত্বের এক উজ্জল নক্ষত্র। মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে। আসিফ মাহমুদের নির্বাচনী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাশেদ খান। রাত ১১ থেকে উত্তাল বুয়েট। চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা। শান্তি প্রস্তাব ও যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াতের ব্যাপক প্রস্তুতি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী কর্তৃক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীন এরবাকান ছিলেন ইসলামী বিশ্ব ও আধুনিক নেতৃত্বের এক উজ্জল নক্ষত্র।

  • প্রকাশিত: শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

ডা. মো. শাহজাহান,

প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীন এরবাকান বা নেজমেদ্দীন এরবাকান হলেন একজন শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, শিল্পউদ্যোক্তা, রাজনীতিক, তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের অন্যতম তাত্তিক ও আধ্যাত্মিক নেতা।
তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন, তুরস্কে শিল্পবিপ্লবের নায়ক এবং ইসলামি আন্দোলনের সিপাহসালার। তিনি ১৯৬৯ সালে মিল্লি গুরুশ বা জাতীয় ভিশন প্রবর্তনের মাধ্যমে তুরস্কে ইসলামি ধারার রাজনীতির প্রবর্তন করেন, তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক এই আটটি উন্নয়নশীল মুসলিম দেশ নিয়ে ডি-৮ গঠিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সাহায্য প্রেরণকারী আলোচিত তুর্কি এনজিও আইএইচএইচ – এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
তুরস্ক ছিল গৌরবময় মুসলিম খিলাফতের কেন্দ্রস্থল। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া তিন মহাদেশজুড়ে এর বিস্তৃতি ছিল। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, ক্রুসেডার ও ইসলামবিরোধী ইহুদি-খ্রিস্টান অপশক্তির জন্য আতঙ্ক এবং মুসলমানদের পবিত্র ভ‚মি ও ইসলামি বিশ্বের প্রতিটি ইঞ্ঝি জমির হেফাযতকারী প্রতিষ্ঠান। ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি উগুজ গোত্রের কায়ী বংশের আমির গাযী উসমান (রহ.) এর বুনিয়াদ রেখেছিলেন। তাঁর প্রতি সনিবন্ধিত খিলাফতে উসমানিয়া (১৫১৭ – ১৯২৪ খ্রি.) ৪০৭ বছর মুসলমানদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আনজাম দিয়েছে। যা ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে খিলাফত বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
মোস্তাফা কামালের নেতৃত্বে খিলাফত বিলুপ্তির পাশাপাশি শরীয়ত নিষিদ্ধ হয়, শরীয়তের ওলামায়ে কেরাম নির্বাসিত হন, ইসলামের প্রচারক পীর-মাশায়েখ ও তাঁদের খানেকা নিষিদ্ধ হয়, মাদরাসা ও দীনী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সীমিতভাবে মসজিদ ব্যবস্থাপনা চালু থাকলেও আরবি আযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, মসজিদে যাতায়তকারীদের গতিবিধিতে নজরদারি করা হয়, মসজিদগামী নওজোয়ানদেরকে হয়রানি ও বিপদের সম্মুখীন করা হয় এবং বড় ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদসমূহ বন্ধ কিংবা জাদুঘরে পরিণত করা হয়। মা-বোনদের পর্দাপ্রথা সম্পূর্ণ ওঠিয়ে দেওয়া হয়, তার পরিবর্তে বাধ্যতামূলকভাবে পশ্চিমা স্টাইলে জিন্স, শর্ট প্যান্ট-শার্ট ও হাপ প্যান্ট পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসলামি গৌরব, উসমানি ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সাহিত্য থেকে তুর্কি জাতির সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে উসমানি হরফের পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে তুর্কি ভাষার সংস্কার করা হয়।
ধর্মকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অন্তরায় হিসেবে ধরে নিয়ে তুরস্ক থেকে ইসলাম ও উসমানি ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণ বিতাড়নের সব বন্দোবস্ত করা হলেও তুরস্কের তৎকালীন সেক্যুলার, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিদ্বেষী নেতৃবৃন্দরা তুরস্কের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৯২৩ সালের ২৩ জুলাই মিত্র ও সহযোগী শক্তির সাথে তুরস্কের লোজানচুক্তি নামে খ্যাত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ-চুক্তির কিছু গোপন ধারার মাধ্যমে তুরস্কের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়, জাতি হিসেবে তুরস্ককে ইউরোপ তার গোলামে পরিণত করে। এসব ধারা অনুযায়ী তুরস্ক তার ভূখণ্ডে ১০০ বছরের মধ্যে তেল-গ্যাস ও কোনো ধরনের খনিজ-সম্পদ আহরণ করতে পারবে না, কোনো গবেষণাকর্মও পরিচালনা কিংবা অনুসন্ধানও করতে পারবে না, এমনকি কোনো তুর্কি কোম্পানিও দেশের বাইরে এককভাবে বা যৌথভাবে এ ধরনের কাজ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তুরস্ক তার প্রয়োজনীয় যাবতীয় তেল-গ্যাস দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে বাধ্য থাকবে। চুক্তিতে ইস্তানবুল বন্দর ও বরপরাস নদীকে আন্তর্জাতিক মালিকানা বলে স্বীকৃত হয় এবং এই বন্দর নদী দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ থেকে তুরস্ক কোনো মাসুল উসুল করতে পারবে না।
রাজনীতিক নেতৃত্ব, আমলা ও প্রশাসন সর্বত্র দুর্নীতি ঝেঁকে বসেছিল। সিন্ডেকেট দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। তুরস্কের তখনকার অর্থনীতি কৃষি, পশুপালন ও রাখাল নির্ভর হয়ে পড়েছিল, এর বাইরে জনগণের কোনো কাজ ছিল না। ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানা ও উৎপাদনমুখী বাণিজ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমলা ও ব্যবসায়ী সিন্ডেকেট বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে জাতিকে পঙ্গু করে রেখে দেশকে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর করে রাখা হয়। এতে করে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে, দেশ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয় এবং তুরস্ক ইউরোপের ‘রুগ্ণ মানুষ’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে। একসময় যেজাতি পুরো মুসলিমবিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তিন মহাদেশজুড়ে শাসনক্ষমতা বিস্তৃত করেছিল এবং বিশ্বের এক সুপার পাওয়ার ছিল সেই তুরস্ক দীন-ধর্মহীনতার এক মহাফিতনার শিকার হয়ে আর ক্ষুধা-দ্রারিদ্রতা, দীনহীনতা ও অর্থনীতিক পশ্চাৎপতার কারণে ভবিষ্যতে পুনর্বার বিশ্বনেতৃত্ব হাসিলের স্বপ্ন দেখবে দূরে থাক, বরং অনিশ্চিত আগামী নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে ছিলো তুরস্কের জনগণ।
এই অবস্থায় মুসলমানদের আধ্যাত্মিক উন্নতি, অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা ও ইসলামিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার পরম লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীন এরবাকান। তিনি বিশ্বনেতৃত্ব নিয়ে হতাশ মুসলমানদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের বীজ বুনে দেন। আধ্যাত্মিক উন্নতি, অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা , বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্প-বাণিজ্যে উৎকর্ষতা অর্জনের মাধ্যমে হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনতে মুসলিম বিশ্বকে আমন্ত্রণ জানান এবং বিশ্বনেতৃত্বের জন্য একটি ইসলামিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন সফল নেতৃত্ব, মুসলমানদের এমন সংকটকালে যে সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের পরিচয় তিনি দিয়েছেন তা হানাদার মোঙ্গল বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুয এবং তুর্কি উসমানী জাতির পিতা আরতগুল ইবনে সুলাইমান শাহের সাথে তুলনীয়।
আনাতোলিয়ায় আরতগুল মোঙ্গলবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি একটি স্বাধীন তুর্কি সালতানতের স্বপ্ন দেখতেন, যার প্রাতিষ্ঠানিক বুনিয়াদ রেখেছিলেন তাঁরই সুযোগ্য সন্তান মহাবীর গাজী উসমান বে। অন্যদিকে বাগদাদের কসাই হালাকু খানের বাহিনী যখন মিসর আক্রমণে অগ্রসর হয় ফিলিস্তিনের আইনে জালুতে প্রথমবারের মতো তাদেরকে যিনি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করেছিলেন তিনি হলেন সেনাপতি রুকুনুদ্দীন বাইবার্স। তাঁর পেছনে মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন মামুলক সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুয। তুরস্কে ইসলামের রাজনীতিক যে পুনর্জাগরণ এর সফল বাস্তবায়নকারী যদি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোয়ান হয়ে থাকেন তাহলে এর স্বপ্নদ্রষ্টা, নির্দেশক ও আধ্যাত্মিক রাহবর হলেন প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীর এরবাকান। এরবাকানের ব্যক্তিত্ব স্পেনবিজয়ী তারিক ইবনে যিয়াদের পৃষ্ঠপোষক মহাবীর মুসা ইবনে নুসাইরের সাথেও সাদৃশ্যপূর্ণ। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা সকলে মহাবীর ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া হিকমত, কৌশল, বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে জাতিকে একটি বিজয়ী শক্তিতে পরিণত করতে তাঁর এক মহাসংগ্রামীর প্রতিচ্ছবি হচ্ছেন নাজমুদ্দীন এরবাকান।

ব্যক্তিত্ব
ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯২৬ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্কের সিনপ শহরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাহমুদ সাবরী এরবাকান একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি বিভিন্ন শহরে বদলি হন। তিনি কায়সেরি শহরে প্রাথমিক শিক্ষা, ইস্তাম্বুলে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং ইস্তাম্বুলে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি রেকর্ডসংখ্যক নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে তিনি জার্মানিতে উচ্চতর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে প্রথম ৬ মাস এবং পরবর্তী ৬ মাস লেফটেনেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং গুমুশ মোটর নামে একটি ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তুরস্কের ইতিহাসে এটিই সর্বপ্রথম দেশীয় কোনো ইঞ্জিন কোম্পানি। এটি অনেক বড় সংগ্রাম ছিল তাঁর জীবনে এবং এজন্য অভ্যন্তরীণ ইহুদি লবির ষড়যন্ত্রের শিকার হন। তার ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সময় তিনি দেখতে পান যে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ যাতে কোনোভাবেই অগ্রসর হতে না পারে এজন্য এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে যাচ্ছিল। তা অবসানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন এবং অল্পসময়ের মধ্যে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভাপতি হওয়ার পরপরই সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে গুরুত্ব দেন যার কারণে অল্পসময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক শক্তির বলে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন।
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দীন এরবাকান কোনিয়া থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অল্পসময়ের মধ্যেই একজন সুবক্তা হিসেবে সুপরিচিত লাভ করেন। এর পাশাপাশি সমগ্র তুরস্কে ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ে কনফারেন্স করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাঁর শিক্ষক প্রখ্যাত আলেমে দীন যাহিদ আহমদ কতকু ও অন্যান্য যুগ শ্রেষ্ঠ আলেমদের পরামর্শে গঠন করেন মিল্লি গুরুশ ঘোষণার মাধ্যমে তুরস্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি আন্দোলনের সূচনা করেন। মিল্লি গুরুশ ঘোষণার পরেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মিল্লি নিজাম পার্টি, কিন্তু এই দলটিকে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তিনি গঠন করেন মিল্লি সালামাত পার্টি, দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪৮টি আসন লাভ করে এবং কোয়ালিশনের মাধ্যমে শর্তভিত্তিক সরকার গঠন করে। এরবাকান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী (অর্থনীতি বিষয়ক) মনোনীত হন এবং তার দল থেকে শিল্প, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন।
তার এ কোয়ালিশন সরকারের সময় ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেওয়া, সাইপ্রাসকে গ্রিসমুক্ত করে তুর্কিশ সাইপ্রাস গঠন, মাদরাসা শিক্ষার দ্বার উন্মুক্তকরণ, ৫ সহস্রাধিক কুরআন কোর্স চালু করা, মাদরাসার ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, সাইদ বদিউযযমান নুরসীর রিসালায়ই নুরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রতাহার, সেনানিবাস সহ সকল সরকারি অফিস আদালতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা, ইসলামি বই-পুস্তক প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করাসহ অনেক কাজ করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সময়ের মধ্যে তিনি বিমান তৈরির কারখানাসহ ২৭০টি ভারি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই উদ্যম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দলকে তার সাথে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে তুরস্কের কোনিয়ায় কুদস দিবসের সমাবেশ পালনের অভিযোগে ১৯৮০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সামরিক শাসকগণ ক্যু করে এ পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে। সেই সাথে এরবাকানকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করে।
১৯৮৩ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি লাভের পর দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে দিয়ে তিনি রেফাহ পার্টি গঠন করেন। ১৯৮৭ সালে ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ওঠে গেলে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং রেফাহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর রেফাহ পার্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৪ সালের স্থানীয় মেয়র নির্বাচনে ইস্তানবুল শহরে দলের তরুণ নেতা এরদোগান বিজয় লাভ করেন। এরপর নতুন উদ্যমে ‘ন্যায়ভিত্তিক সমাজ’ এ স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু এ সরকার মাত্র ১১ মাস ক্ষমতায় টিকেছিল। এক সামরিক অভ্যুথানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাঁর এই এগারো মাসের শাসনামলে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুদের হারকে কমিয়ে আনেন। এই অল্পসময়ের ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেন। সকলের বেতন তিনি ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। শিল্পায়নে গতি ফিরিয়ে এনে পাঁচ বছরের মধ্যে তুরস্ককে জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন।
তাঁর এসব উত্তরোত্তর সফলতায় ইহুদিপন্থীরা রেফাহ পার্টিকে বন্ধ করার লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রপাগাণ্ডা চালায় ও তাঁর পার্টি শরীয়ত কায়েম করবে এ অভিযোগে তাঁকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর মিল্লি গুরুসের অপর নেতা রেজাই কুতানের মাধ্যমে ফযীলত পার্টি গঠন করা হয়, পরে এটিও নিষিদ্ধ করা হয়। জেল থেকে বের হয়ে ২০০১ সালের ২০ জুলাই সাদাত পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে দলের তরুণ প্রজন্ম এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুলের নেতৃত্বে একে পার্টি গঠিত। দল বিভক্ত হলেও এরবাকান একেপি ও সাদাত উভয় পার্টির তাত্তিক নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এ কারণে এরবাকানের বিরুদ্ধে বাম ও সেক্যুলারদের অভিযোগ ছিল, তিনি দুই পার্টি দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। এক পার্টি দেশ শাসন করছে, আর অন্য পার্টি সামাজিক কাজ ও ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত। পরবর্তীতে সাদাত পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হলে ৮৪ বছর বয়সে ২০১০ সালে এরবাকান সাদাত পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত তাঁর জানাজায় ব্যাপক লোক সমাগম হয়। তার ২ ছাত্র তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগান এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল লাশের খাটিয়া ধরে তাঁর লাশ বহন করেন এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভুষিত করেন।

ইসলামি আন্দোলনের অভিজ্ঞতা
১৯৬৯ সালে তিনি মিল্লি গুরুশ নামে একটি ইশতিহার প্রচার করেন। এর মূল উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে, আধ্যাত্মিক উন্নতি: ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া জাতিকে পুনরায় ইসলামের দিকে আহবান ও তাদেরকে যোগ্য মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা। বিশেষ করে যুবকদের মাঝে ইসলামের প্রচার ও প্রসার করা।
অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বিতা, আমেরিকা-ইউরোপ ও রাশিয়ার অনুকরণ না করে স্বতন্ত্রভাবে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নতি করে নতুন এক তুরস্ক গঠন সহ ইত্যাদি।

লেখক : চিকিৎসক, সংগঠক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট